ঢাকা , শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫ , ১০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​ভাঙন ঝুঁকিতে হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ প্রকল্প

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৪-০৭-২০২৫ ০১:০৩:৩৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৪-০৭-২০২৫ ০১:০৩:৩৯ অপরাহ্ন
​ভাঙন ঝুঁকিতে হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ প্রকল্প ​ছবি: সংগৃহীত
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বালুমহালের নির্ধারিত সীমানার বাইরে গিয়ে নদীর তীর ঘেঁষে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে সরকারি বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত এলাকা। ইতিমধ্যে নদীর তীরে ফেলা ডাম্পিং ব্লক সরে গেছে। সিসি ব্লকের সারির মাঝখানে দেখা দিয়েছে ফাটল। ফলে যেকোনো মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে বিদ্যুৎ প্রকল্পটির বিস্তীর্ণ এলাকা।

এ প্রসঙ্গে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম বলেন, দুঃখজনক হলেও ঘটনাটি সত্য। নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৯ লাখ টাকা জরিমানা করেছি। উপজেলা প্রশাসন থেকে আমরা বিষয়টি তদারকি করছি। ইউএনও মো. আশরাফুল আলম আরও বলেন, পাশাপাশি আরপিসিএলকে তাদের নিজস্ব জনবল দিয়ে বিষয়টি তদারকি করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি তারা নিয়ম মেনে বালু উত্তোলন না করে তা হলে তাদের ব্যাপারে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করব আমরা।

এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে ষোলআনী বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী ড. সুশান্ত কুমার সাহা বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত রয়েছি। আমাদের বিদ্যুৎ প্রকল্পের ১০ মিটারের কম দূরত্ব থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রকল্প এলাকার জন্য হুমকির। এতে করে যেকোনো মুহূর্তে প্রকল্পের বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে আরপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. নাজমুস সাদাত বলেন, তাদের ২৬ কোটি টাকার বালুমহালের কারণে আজ আমাদের হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ প্রকল্প হুমকির সম্মুখীন। এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আমরা মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ষোলআনী, নয়ানগর রমজানবেগ ও চর কালীপুরা মৌজায় মেঘনা নদীর ১২৮ একর এলাকায় একটি বালুমহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। চলতি বছর ২১ কোটি টাকায় বালুমহালটির ইজারা পায় আদন ড্রেজিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্যাট-ট্যাক্সসহ ২৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা জমা দিয়ে তারা বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলন শুরু করে। নদীর তীর থেকে ১ হাজার ৫০০ ফুট দূরত্ব মেনে বালু উত্তোলন করার কথা থাকলেও স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রথম থেকেই ইজারাদার প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সীমানার বাইরে গিয়ে নদীর তীর ঘেঁষে বালু উত্তোলন করছে।

সরেজমিন গজারিয়া উপজেলার ষোলআনী বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর তীর ঘেঁষে বালু উত্তোলন করছে অর্ধ শতাধিক ড্রেজার। বালু উত্তোলনের ফলে বিদ্যুৎ প্রকল্পটির ডাম্পিং ব্লক দিয়ে করা স্থায়ী প্রটেক্টিভ কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে প্রকল্পটির বিস্তীর্ণ এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ধারাবাহিকভাবে নদীর তীর ঘেঁষে বালু উত্তোলনের কারণে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে ব্লকগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি লাগানো থাকে। এদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি হওয়া মানে নিচের স্তরের ব্লক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সামনে হয়তো প্রটেক্টিভ ওয়ার্কের পুরোটাই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়েছে ষোলআনী, নয়ানগর রমজানবেগ ও চর কালীপুরা মৌজায়। কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি দৌলতপুর মৌজা থেকেও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রশাসনের কর্তাদের প্রতি আহ্বান আপনারা বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি দেন। স্থানীয় বাসিন্দা আলী আকবর বলেন, দিনের বেলা টুকটাক নিয়ম মেনে কাজ চললেও সন্ধ্যা নামলেই বেপরোয়া হয়ে ওঠে ড্রেজারগুলো। নদীর তীরে ষোলআনী বিদ্যুৎ প্রকল্প ঘেঁষে বালু উত্তোলন করা হয় তখন। সকাল ৮টা পর্যন্ত এভাবে একটানা চলতে থাকে বালু উত্তোলন।

ষোলআনী বিদ্যুৎ প্রকল্পে ঘুরতে আসা নাজিব উল্লাহ বলেন, বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে সর্বোচ্চ ১০০ ফুট দূরত্বে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সিসি ব্লকের সারির মাঝে ফাটল দেখা দিয়েছে। মনে হচ্ছে আর কয়েক দিনের মধ্যে অনেক জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

 
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ